ইসলাম শান্তির ধর্ম কেন ও কীভাবে-১
২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম
‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’ কথাটি মুসলিম মাত্রই মনের কথা এবং অতি সত্য ও বাস্তব কথা। তবে বহুল উচ্চারিত অনেক সত্য কথার মতো এ কথারও মর্ম ও বিস্তৃতি সঠিকভাবে উপলব্ধি করা প্রয়োজন। কারণ, সঠিক কথারও ভুল বা অসম্পূর্ণ অর্থ গ্রহণের সম্ভাবনা থাকে। কুরআন মাজিদে আল কুরআনের তথা ইসলামের শিক্ষা ও বিধানের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে এভাবেÑ ‘...তোমাদের কাছে আল্লাহর নিকট থেকে এসেছে এক জ্যোতি ও স্পষ্ট কিতাব। যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে চায় এ দ্বারা তিনি তাদের শান্তির পথে পরিচালিত করেন এবং অন্ধকারসমূহ থেকে আলোর দিকে বের করে আনেন নিজ ইচ্ছায়। আর তাদের পথ দেখান সরল পথ।’ (সূরা মাইদা, ১৫-১৬)
এ আয়াতে ‘সালাম’ শব্দ আছে। সাধারণত ‘সালাম’ শব্দের অর্থ করা হয় ‘শান্তি’। এ অর্থ ভুল নয়, তবে সূক্ষ্ম অর্থ হচ্ছে ‘মুক্তি’। বিপদ ও অশান্তি থেকে মুক্তিই তো শান্তির বড় উপায়। ইসলাম মানুষকে বিপদ ও অশান্তি থেকে মুক্তির পথ প্রদর্শন করে। তাই ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলামের কিতাব আল কুরআন মানুষকে নাজাতের পথ দেখায়। কী থেকে নাজাতের? প্রথমত, আখিরাতের মহাবিপদ থেকে নাজাতের। ইসলামী আকিদার এক প্রধান বিষয় আখিরাতে ঈমান এবং ইসলামী শিক্ষা-দীক্ষার গোটা ব্যবস্থাটিই তাকওয়া (খোদাভীতি) ও ঈমান বিল আখিরাহ (আখিরাতের উপর ঈমান)-এর উপর ভিত্তিশীল।
তেমনি ইসলামী দাওয়াতের প্রধান অংশ আখিরাত ও আখিরাতের নাজাত। ইসলামের নবী, বিশ্ব মানবতার নবী হজরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর দাওয়াতের অন্যতম প্রধান বিষয় ছিল আখিরাত এবং তাঁর গোটা জীবনের সফল সমুজ্জ্বল বিস্তৃত ও বিচিত্র দাওয়াতি কর্মতৎপরতার অন্তর্নিহিত ঐক্যের সূত্রটি ছিল আখিরাত। ইসলামের আকিদা-প্রসঙ্গ হোক বা ইবাদত, লেনদেন হোক বা সামাজিকতা, স্বভাব-চরিত্র হোক বা আচার-আচরণ, সৎকাজের আদেশ হোক বা অসৎকাজের নিষেধ এককথায় মানবজীবনের সব বিষয়ে ইসলামের যে বিশ্বাস ও বিধান তা গ্রহণ ও অনুসরণের মূল প্রেরণা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখিরাতের নাজাত।
এ কারণে ইসলামের করণীয়-বর্জনীয় সব বিষয়ের সাথে যে পরিভাষাগুলো জড়িত তা হচ্ছে সওয়াব ও গুনাহ, জান্নাত ও জাহান্নাম, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অসন্তুষ্টি। ইসলামের কোন শিক্ষাটি এমন যেখানে পাপ-পুণ্যের, জান্নাত-জাহান্নামের এবং আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির প্রসঙ্গ নেই? ইসলামী দাওয়াতের শিরোনাম-বাক্য যদি হয় ‘আসিøম তাসøাম’ ‘ইসলাম কবুল কর নাজাত পাবে।’ তাহলে এই নাজাত প্রধানত আখিরাতের নাজাত।
ইসলামের নবী (সা.)-এর আবির্ভাবের অন্যতম উদ্দেশ্য যদি হয়- ‘ইন্নি নাজিরুল লাকুম বাইনা ইয়াদাই আযাবিন শাদিদ’ (আমি এক কঠিন আজাবের পূর্বে তোমাদের হুঁশিয়ারকারী)। তাহলে এই আযাব প্রধানত আখিরাতের আজাব। সুতরাং ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’- কথাটির প্রধান মর্মবাণী আখিরাতের নাজাত ও শান্তি। অর্থাৎ ইসলাম ওই ধর্ম যা আখিরাতের নাজাত ও শান্তির পথ প্রদর্শন করে। বরং একমাত্র ইসলামই ওই ধর্ম যার মাধ্যমে আখিরাতে নাজাত পাওয়া যাবে। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছেÑ ‘কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো দ্বীন কবুল করতে চাইলে তার নিকট থেকে তা কখনো গ্রহণ করা হবে না। আর সে হবে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সূরা আলে ইমরান, ৮৫) এই মর্ম বিস্মৃত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
এ অর্থ অনুসারে ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’ কথাটিতে বিশ্বাসের দাবি, আখিরাতে নাজাতের যে পথ ইসলাম দেখায় সেই পথের পথিক হওয়া। ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী আপন আকিদা-বিশ্বাস দুরস্ত করা, আল্লাহর হক ও বান্দার হক সম্পর্কে জানা ও তা আদায় করা, সব রকমের গোনাহ ও পাপাচার থেকে এবং আল্লাহর হক ও বান্দার হক নষ্ট করা থেকে বিরত থাকা। মৃত্যু পর্যন্ত ইসলাম-নির্দেশিত পথে থেকে আখিরাতের চিরস্থায়ী শান্তির উপযুক্ত হওয়া।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ইসলাম কি শুধু আখিরাতের মুক্তির পথই প্রদর্শন করে? পার্থিব শান্তির উপায় নির্দেশ করে না? করে। ইসলাম পার্থিব শান্তি ও কল্যাণের পথও নির্দেশ করে। আর এ হচ্ছে ‘ইসলাম শান্তির ধর্ম’ কথাটির বিস্তৃত মর্মের দ্বিতীয় অংশ। শুরুতে সূরা মাইদার যে আয়াত উদ্ধৃত হয়েছে তাতে ‘সুবুলাস সালাম’ (মুক্তির পথসমূহ) শব্দবন্ধে পার্থিব মুক্তিও শামিল। এক্ষেত্রেও ইসলাম ওই অদ্বিতীয় ধর্ম যাতে মানবজীবনের সব ক্ষেত্রের এবং মানবজাতির সব শ্রেণির যথার্থ শান্তি ও কল্যাণের পথনির্দেশ রয়েছে। এটা বোঝার জন্য ইসলামের এক একটি শিক্ষা ও বিধানের যথার্থতা নিয়ে নির্মোহ চিন্তা-ভাবনাই যথেষ্ট। তাহলে দেখা যাবে ইসলামের শিক্ষা ও বিধানের অনুসরণেই রয়েছে মানুষের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনের শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা ও প্রশান্তির নিশ্চয়তা।
বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্র ও লন্ডনে ৩শ’ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে হাসিনা-জয়ের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু
রাজশাহী মহানগরীতে ঘন কুয়াশা
আবারও ভানুয়াতুতে দ্বীপপুঞ্জে ৬.২ মাত্রার ভূমিকম্প
হাজীগঞ্জে ভরাট মিঠানিয়া খালের মুখ, হুমকিতে ফসলি জমি
রাহাতের সুরের মুর্ছনায় বিমোহিত দর্শক, বাংলায় বললেন 'আমরা তোমাদের ভালোবাসি'
‘প্রশাসন ক্যাডার নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে’
যুক্তরাজ্যে ট্রাম্পের বিশেষ দূত হিসেবে মার্ক বার্নেট নিযুক্ত
ফাইনালে ভারতের কাছে বাংলাদেশের হার
ফ্রেন্ডলি ফায়ার দুর্ঘটনায় লোহিত সাগরে মার্কিন যুদ্ধবিমান ধ্বংস
ইরানে যাত্রীবাহী বাস খাদে পড়ে নিহত ১০
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী নারী কে, জানেন?
বাংলাদেশি রোগী পেতে সীমান্ত পর্যন্ত মেট্রো চালু করবে ভারত
হাত ফসকে আইফোন পড়ে গেল মন্দিরের দানবাক্সে, ফেরত দিতে অস্বীকৃতি
কুয়াশায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একাধিক দুর্ঘটনা: নিহত ১, আহত ১৫
ঢাকার বায়ুমানে উন্নতির কোনো লক্ষণ নেই, বিপজ্জনকের কাছাকাছি
উগ্রবাদী সন্ত্রাসী 'সাদ' পন্থীদের কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় মানববন্ধন
বাংলাদেশ সীমান্তে অত্যাধুনিক ড্রোন মোতায়েন ভারতের
নরসিংদীতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ছাত্রদলকর্মী নিহত
সিনেটে প্রার্থী হতে সরে দাঁড়ালেন লারা ট্রাম্প
আমাদেরকে আর স্বৈরাচার হতে দিয়েন না : পার্থ